এমপি হওয়ার দৌড়ে ‘স্বতন্ত্র’ ৩৮ উপজেলা চেয়ারম্যান

প্রতিদিনের বাংলাদেশ :

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পদ ছেড়েছেন স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা। এরই মধ্যে এমপি হওয়ার দৌড়ে ৫২ উপজেলা চেয়ারম্যান, ৪ পৌর মেয়র, ৩ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ১ জন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। তা ছাড়া ঢাকার দুজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরও সংসদে প্রার্থী হয়েছেন।

তাদের মধ্যে অনেকেই সরকারদলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। আবার অনেকেই মনোনয়ন না পেয়ে হয়েছেন ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী। ৫২ উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে ৩৮ জনই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের তিনজনের মনোনয়নপত্র বাতিলেরও খবর পাওয়া গেছে।

উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে ১১ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে প্রার্থী হয়েছেন। অন্য একটি দলে যোগ দিয়ে প্রার্থী হয়েছেন আরেকজন। অপর দুজন আম-ছালা দুটোই হারিয়েছেন। অর্থাৎ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েও দলীয় মনোনয়ন পাননি, আবার শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীও হননি। পদত্যাগ করা চার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মধ্যে তিনজনই এমপি হতে নৌকা নিয়ে লড়ছেন। জেলা পরিষদের এক চেয়ারম্যান ও এক সদস্য লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। পদত্যাগ করা চার পৌর মেয়রের দুজনই হয়েছেন নৌকার মাঝি। মনোনয়ন না পেয়ে দুজন স্বতন্ত্র দাঁড়িয়েছেন। তা ছাড়া ঢাকার দুজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর তিনটি আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ৩৮ উপজেলা চেয়ারম্যান

টাঙ্গাইল-২ আসনে গোপালপুর উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইউনুস ইসলাম তালুকদার, ঢাকা-২০ আসনে ধামরাই উপজেলার সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোহাদ্দেছ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে রূপগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান ভূঁইয়া, টাঙ্গাইল-৭ আসনে মির্জাপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু, রাজবাড়ী-১ আসনে সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক বিশ্বাস, মানিকগঞ্জ-২ আসনে সিংগাইর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান খান, নরসিংদী-৪ আসনে মনোহরদী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান (বীরু), গোপালগঞ্জ-১ আসনে মুকসুদপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মো. কবির মিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে শিবগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে বেলকুচি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম (সাজেদুল), বগুড়া-৫ আসনে আদমদীঘি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান রাজু, পাবনা-৩ আসনে চাটমোহর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হামিদ, নাটোর-৩ আসনে সিংড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, নেত্রকোণা-১ আসনে দুর্গাপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌস, ময়মনসিংহ-১ আসনে হালুয়াঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সায়েম, শেরপুর-৩ আসনে ঝিনাইগাতী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম, ময়মনসিংহ-৮ আসনে ফুলবাড়িয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক সরকার, মৌলভীবাজার-২ আসনে কুলাউড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এ. কে. এম. সফি আহমেদ (সালমান), চাঁদপুর-৪ আসনে ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে সাতকানিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব, চাঁদপুর-৫ আসনে হাজীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান গাজী মাঈনুদ্দিন, কুমিল্লা-৪ আসনে দেবিদ্বার উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা-১১ আসনে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস ছোবহান ভূঁইয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান, চট্টগ্রাম-১৪ আসনে চন্দনাইশ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার চৌধুরী, কুমিল্লা-৫ আসনে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এম এ জাহের, নোয়াখালী-২ আসনে সোনাইমুড়ী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার আর আমিন, চট্টগ্রাম-২ আসনে ফটিকছড়ি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আবু তৈয়ব, মেহেরপুর-১ আসনে সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ইয়ারুল ইসলাম, কুষ্টিয়া-২ আসনে মিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান কামরুল আরেফিন, খুলনা-৫ আসনে ফুলতলা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন, রংপুর-৫ আসনে মিঠাপুকুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার, নীলফামারী-৪ আসনে সৈয়দপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন, গাইবান্ধা-২ আসনে সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সারোয়ার কবীর, ঠাকুরগাঁও-২ আসনে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আলী আসলাম, দিনাজপুর-৪ আসনে চিরিরবন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম তরিক এবং বরিশাল-৬ আসনে বাকেরগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামসূল আলম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নরসিংদী-৪ আসনের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম খান বীরু বলেন, ‘এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে দল থেকে কোনো বাধা নেই। দীর্ঘদিন এলাকার মানুষের সেবা করেছি। তাই নেতাকর্মী ও মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রার্থী হয়েছি। আশা করি ব্যালটের মাধ্যমে মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন হবে।’

নৌকার মাঝি ১১ জন

কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে করিমগঞ্জ উপজেলার সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মো. নাসিরুল ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে সিরাজদিখান উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে উল্লাপাড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম, বগুড়া-৩ আসনে শেরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মজনু, ময়মনসিংহ-৫ আসনে মুক্তাগাছা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই আকন্দ, শেরপুর-৩ আসনে শ্রীবরদী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এ. ডি. এম. শহিদুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ-২ আসনে শাল্লা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৪ আসনে সীতাকুণ্ড উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম-১২ আসনে পটিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, সাতক্ষীরা-২ আসনে সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, সাতক্ষীরা-৪ আসনে শ্যামনগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এস. এম. আতাউল হক নির্বাচনে পেয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন।

জেলা পরিষদের ৩ চেয়ারম্যানের নৌকা

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনজন। তারা হলেনÑ কুড়িগ্রাম-২ আসনে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আলী, লালমনিরহাট-৩ আসনে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যন মতিয়ার রহমান এবং হবিগঞ্জ-১ আসনে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যন মুশফিক হোসেন চৌধুরী। মনোনয়ন না পেয়ে যশোর-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম এবং সিরাজগঞ্জ-৫ আসন থেকে জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল লতিফ বিশ্বাস।

২ পৌর মেয়রও স্বতন্ত্র প্রার্থী

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ ফয়সাল এবং ময়মনসিংহ-৭ আসন থেকে ত্রিশাল পৌরসভার তিনবারের মেয়র এ বিএম আনিছুজ্জামান। তা ছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন রাজশাহী-৪ আসনে তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আবুল কালাম আজাদ এবং বগুড়া-২ আসন থেকে শিবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র তৌহিদুর রহমান মানিক।

এমপি প্রার্থী ২ কাউন্সিলর

দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ঢাকা-৭ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন হাসিবুর রহমান মানিক। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর। অপরদিকে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ঢাকা-১৩ ও ১৪ আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও জাতীয় পার্টির নেতা শফিকুল ইসলাম সেন্টু। তবে এই দুজন এখনও পদত্যাগ করেননি বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, পদত্যাগ এখনই করতে হবে না। চূড়ান্ত হলে পরে সিদ্ধান্ত নেব।

এদিকে কক্সবাজার-২ আসনে মহেশখালী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শরীফ বাদশা বিএনএম থেকে প্রার্থী হয়েছেন। তা ছাড়া পদত্যাগ করেও রামু উপজেলার চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল এবং বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব নির্বাচনে প্রার্থী হননি।

৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল

উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ কর স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া যে ৩ জনের মনোনয়ন বাতিলের খবর পাওয়া গেছে তারা হলেন রাজবাড়ী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমদাদুল হক বিশ্বাস, রংপুর ৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার এবং বরিশাল ৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশূল আলম। বিভিন্ন কারণে তাদের মনোনয়ন বাতিল করেছেন নিজ নিজ এলাকার রির্টানিং অফিসার। তবে তারা সবাই নির্বাচন কমিশনে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।